মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান এলাকায় আলোচিত ইজিবাইক চালক শাহাদাত’কে ব্রিজ থেকে ফেলে নির্মমভাবে হত্যা করে ইজিবাইক ছিনতাই: এই ক্লুলেস হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারীসহ চক্রের ০৭ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১০।
১। র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই দেশের সাবির্ক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সব ধরণের অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। জঙ্গী, সন্ত্রাসী, সংঘবদ্ধ অপরাধী, ছিনতাইকারী, মাদক ব্যবসায়ী, অপহরন ও হত্যাসহ বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর মামলার আসামীদের গ্রেফতারে র্যাব নিয়মিত অভিযান চালিয়ে আসছে। গোয়েন্দা নজরদারী ও আভিযানিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে র্যাব ইতিমধ্যেই জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
২। রাজধানী ঢাকার কদমতলী থানাধীন মদিনাবাগ এলাকায় বসবাসকারী শাহাদাত হাওলাদার (৩০) নামক একজন ইজিবাইক চালক সে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন চুনকুটিয়া এলাকাস্থ একটি গ্যারেজ থেকে ভাড়া করে ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। গত ২৩ এপ্রিল ২০২৩ খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক বিকাল ১৬:০০ ঘটিকায় প্রতিদিনের ন্যায় সে উক্ত গ্যারেজ থেকে ইজিবাইক নিয়ে যাত্রী পরিবহন করার জন্য বের হয়। ঐদিন রাতে শাহাদাত প্রতিদিনের ন্যায় বাসায় না ফিরলে তার পরিবারের লোকজন তাকে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে ফোন বন্ধ পায়। এতে তারা চিন্তিত হয়ে পড়ে ও তাকে বিভিন্ন জায়গায় খোজাখুজি শুরু করে। পরদিন ২৪ এপ্রিল ২০২৩ খ্রিঃ তারিখ সকাল আনুমানিক ০৯:৪৫ ঘটিকায় শাহাদাতের মোবাইল ফোন থেকে কল দিয়ে অজ্ঞাত একজন ব্যক্তি জানায় মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান থানাদীন কুচিয়ামোড়া রেলওয়ে ওভার ব্রীজের নিচে একটি লাশ পড়ে আছে। সংবাদ পেয়ে শাহাদাতের পরিবারের লোকজন দ্রæত ঘটনাস্থলে পৌঁছে শাহাদাতের মাথা, মুখ ও কপালে রক্তফোলা জখম অবস্থায় মৃত দেহ দেখতে পায়। ঘটনার সংবাদ পেয়ে সিরাজদিখান থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে শাহাদাতের মৃতদেহ উদ্ধার পূর্বক সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে লাশ ময়না তদন্তের জন্য মুন্সিগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।
৩। উক্ত ঘটনার পর মৃতের ভাই শহিদুল ইসলাম জসিম (৪০) তার পরিবারের সাথে পরামর্শ করতঃ মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান থানায় অজ্ঞাতনামা ২/৩ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুস্যুতাসহ একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নম্বর- ২৮, তাং- ২৪/০৪/২০২৩ খ্রিঃ, ধারা- ৩৯৪/৩০২/৩৪ পেনাল কোড।
৪। ইতোমধ্যে হত্যাকান্ডটি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে প্রচার করায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। ঘটনাটি জানতে পেরে র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল আলোচিত ও ক্লু-লেস ইজিবাইজ চালক শাহাদাত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামীদের গ্রেফতার গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে।
৫। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১০ এর উক্ত আভিযানিক দল ঘটনাস্থলের আশপাশ পরিদর্শন করে তথ্য প্রযুক্তির সাহায্য ও গোয়েন্দা তথ্যের সহায়তায় উক্ত হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়। গতকাল ২৮ এপ্রিল ২০২৩ খ্রিঃ তারিখ ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ ঢাকা ও মুন্সীগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উক্ত হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী মোঃ জুয়েল বেপারী (২৭)সহ উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত মোঃ সাজ্জাদ শেখ (২৩), মোঃ ইসমাইল হোসেন (২৩), মোঃ লিমন মাতুব্বর (২১), মোঃ সোহাগ (২০) ও রোমান শিকদার (১৮)’দের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
৬। গ্রেফতারকৃত আসামীদের নিকট ছিনতাইকৃত ভিকটিমের ইজিবাইকটির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায় উক্ত ইজিবাইকটি মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান এলাকায় বসবাসরত মোঃ জাকির হোসেন এর নিকট বিক্রি করে দিয়েছে। আসামীদের দেয়া তথ্যমতে র্যাব-১০ এর উক্ত আভিযানিক দল অদ্য ২৯/০৪/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ ভোর রাতে মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান এলাকায় অপর একটি অভিযান পরিচালনা করে মোঃ জাকির (৪০)’কে গ্রেফতার করে। জাকিরের দেয়া তথ্য মতে জাকিরের গ্যারেজ হতে ছিনতাইকৃত ইজিবাইকটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এছাড়াও উক্ত গ্যারেজ হতে বিভিন্ন সময়ে আসামীদের কতৃক ছিনতাইকৃত আরও ০৫টি ইজিবাইক উদ্ধার করা হয়।
৭। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গত ২২/০৪/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ ঈদের দিন জুয়েল, সাজ্জাদ, লিমন, রোমান, ইসলাইল ও সোহাগ মিলে মাওয়া ঘুরতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঘন্টায় ৩২০/- টাকা হিসাবে ভিকটিম শাহাদাত এর ইজিবাইকটি ভাড়া করে ঘুরতে যায়। বেড়ানোর সময় তারা ইজিবাইকটি ছিনতাই করবে বলে পরিকল্পনা করে। কিন্তু ঈদের দিন বিধায় সেই দিন না করে পরবর্তী দিন উক্ত ইজিবাইকটি ছিনতাই করবে বলে পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা ভিকটিমকে ঈদের দিন ১,৯০০/- টাকা ভাড়া দেয় এবং পরের দিনও তারা ঘুরতে যাবে বলে জুয়েল ভিকটিমের মোবাইল নম্বরটি সংরক্ষণ করে রাখে। পরের দিন ২৩/০৪/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ বিকাল আনুমানিক ১৭:০০ ঘটিকায় তাদের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ভিকটিম শাহাদাতকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কল করে কদমতলী লাবনী রেস্টুরেন্ট এর সামনে ডেকে আনে। সেখান থেকে জুয়েল, সাজ্জাদ ও লিমন ইজিবাইকে উঠে এবং কিছুক্ষন পর ইসমাইলকে ফোন দিয়ে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন কালীগঞ্জ, খালপাড় অবস্থান করতে বলে। কালীগঞ্জ এলাকা হতে ইসমাইলকে সাথে নিয়ে তারা মাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা করে। অতঃপর তারা শ্রীনগরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সময় ক্ষেপন করতে থাকে। ঘুরাফেরা শেষে ফেরার পথে আনুমানিক রাত ২৩:০০ ঘটিকায় সিরাজদিখান থানাধীন কুচিয়ামোড়া রেলওয়ে ওভার ব্রীজের উপরে এসে ইজিবাইক থামিয়ে গল্প করতে থাকে। তার কিছুক্ষন পর তারা আশপাশে কোন লোকজন দেখতে না পেয়ে জুয়েল, সাজ্জাদ, ইসমাইল ও লিমন ভিকটিম শাহাদাত এর মুখ, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাথারি কিলঘুষি মারতে থাকে। এতে ভিকটিম ডাক-চিৎকার করলে জুয়েল ভিকটিমের মুখ চেপে ধরে। মারামারির একপর্যায় ভিকটিম অজ্ঞান হয়ে পরলে দুবৃত্তরা ভিকটিম শাহাদাত’কে উক্ত ব্রীজ থেকে নিচে ফেলে দিয়ে ইজিবাইকটি নিয়ে পালিয়ে যায়।
৮। জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত আসামীরা বিভিন্ন সময়ে ইজিবাইক/অটো-রিক্সা ভাড়া করে তাদের সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে গিয়ে দেশীয় ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে প্রাণনাশের হুমকিসহ বিভিন্ন প্রকার ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে ইজিবাইক/অটো-রিক্সা ছিনতাই করে ২০,০০০-৩০,০০০/- টাকার বিনিময়ে গ্যারেজ মালিক মোঃ জাকির এর নিকট বিক্রয় করত। এছাড়া গ্রেফতারকৃত জুয়েল, লিমন ও ইসমাইলের এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যা চেষ্টা ও চুরিসহ একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
৯। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত জাকির এর নিকট থেকে জানা যায় যে, সে ছিনতাইকৃত ইজিবাইকটি আসামীদের নিকট থেকে ২৫,০০০/- টাকায় ক্রয় করে। পরবর্তীতে ইজিবাইকের রং ও কাঠামো পরিবর্তন করে অন্যত্র বিক্রয় করার পরিকল্পনা করেছিল। এছাড়াও সে উক্ত হত্যাকান্ডে জড়িত চক্রটির নিকট হতে বিভিন্ন সময়ে চোরাই/ছিনতাইকৃত ইজিবাইক/অটো-রিক্সা স্বল্প মূল্যে ক্রয় করে সেগুলোর রং এবং কাঠামো পরিবর্তন করে অধিক মূল্যে অন্যত্র বিক্রয় করে আসাছিল বলে জানা যায়।
১০। গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।