সশস্ত্র বাহিনীর মেজর পরিচয় দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও অসংখ্য প্রতারণার মূলহোতা ভুয়া মেজর আব্দুর রাজ্জাক @ সাগর চৌধুরী’কে টাংগাইলের কালিহাতি এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১০। এরই ধারাবাহিকতায় অদ্য ১৩ মে ২০২৩ খ্রিঃ তারিখ র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতি থানাধীন দক্ষিণ বেতডোবা এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয় দিয়ে চাকুরির প্রলোভন ও চাকুরি দেওয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা আতœসাৎ করার অভিযোগে ভুয়া মেজর মোঃ আব্দুর রাজ্জাক @ মেজর সাগর চৌধুরী @ জাহিদ চৌধুরী @ সুমির (৩১), পিতা- মোঃ খাইরুল ইসলাম, সাং-গোবিন্দপুর, থানা-সাদুল্যাপুর, জেলা-গাইবান্ধা, বর্তমান ঠিকানা- সাং- খাইরুন মুন্সির পাড়া, থানা- কালীহাতি, জেলা- টাঙ্গাইল’কে গ্রেফতার করে। এসময় তার নিকট ০১ সেট বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কম্ব্যট ইউনিফর্ম, ০১টি সেনাবাহিনীর কম্ব্যট কাধব্যাগ,০১টি সেনাবাহিনীর সাগর নামীয় নেমপ্লেট, ০১টি সেনাবাহিনীর ফেস মাস্ক, ০১টি সেনাবাহিনীর ফিল্ড ক্যাপ,০১টি সেনাবাহিনীর ব্যাজের প্রতিলিপিসহ মানিব্যাগ, ০১টি পুরাতন সেনাবাহিনীর গেঞ্জি, ০১টি মোটরসাইকেল এর লাইসেন্স, ০৫টি সেনাবাহিনীতে নিয়োগের ভূয়া নিয়োগপত্র ও মেডিকেল সনদপত্র, ০৫টি ভুয়া এনআইডি কার্ড, ০১টি পোস্ট অফিস সেভিংস বহি, ০১টি সোনালী ব্যাংকে টাকা প্রেরণের রিসিপ্ট কপি, ০৪টি মোবাইল ফোন ও ১১টি বিভিন্ন কোম্পানীর সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গত ২৪/০১/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেইসবুক) এর মাধ্যমে ভিকটিম মোছাঃ সোনিয়া (৩৯) এর সাথে প্রতারক সাগর এর পরিচয় হয়। সাগর সোনিয়ার সাথে কথাবার্তা বলার সময় নিজেকে সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয় দেয় এবং বর্তমানে সে মাঝিরা সেনানিবাস, বগুড়ায় কর্মরত আছে বলে জানায়। এছাড়াও সে সোনিয়ার সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেইসবুক, মেসেঞ্জার ও ইমু) কথা বলার সময় বিভিন্ন সময় সেনাবাহিনীর পোশাক পরিহিত অবস্থায় কথা বলত। যার ফলে ভিকটিম সোনিয়া প্রতারক সাগরকে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা (মেজর) বলে বিশ্বাস করে। আলাপচারিতার এক পর্যায় সাগর সোনিয়াকে মাঝিরা সেনানিবাস, বগুড়া সিএমএইচ এ নার্স এর চাকুরি দেওয়ার বিষয়ে প্রলোভন দেখায়। ভিকটিম সোনিয়া সাগরকে সরল মনে বিশ্বাস করে এবং ভিকটিমের একটি চাকুরির প্রয়োজন থাকার কারণে সাগরের প্রস্তাবে রাজি হয়। অতঃপর সে তার আরও ৪/৫ জনকে চাকুরী দেওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে জানায়। সাগরের কথামত সোনিয়া তার পরিচিত ১। মোছাঃ শাপলা খাতুন (২৫), ২। মোছাঃ মুরশালিনা খাতুন (২৬), ৩। মোছাঃ মিতা খাতুন (২৭) ও ৪। জোৎ¯œা বেগম (২৭)’দেরকে চাকুরীর জন্য রাজী করিয়ে হয়ে সকলেই সাগরের সাথে মেসেঞ্জার ও ইমুতে ভিডিও কলে কথা বলে। পরবর্তী সাগর প্রত্যেকের নার্সে চাকুরীর জন্য জনপ্রতি পাঁচ লক্ষ টাকা দাবি করে। সাগরের কথামত সকলেই ১৫/০২/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ হতে ২৫/০/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ এর মধ্যে সাগরের দেয়া নগদ ও বিকাশের বিভিন্ন নম্বরে সর্বমোট ১৭ লক্ষাধিক টাকা পঠায়। উল্লেখিত টাকা প্রদানের কিছুদিন পর ভিকটিমরা তাদের চাকুরির বিষয় জানার জন্য প্রতারক সাগরের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। কিন্তু ভিকটিমরা দেখতে পায় সাগর তার ফেইসবুক আইডি ডিএকটিভ করে দিয়েছে এবং সকল মোবাইল নম্বরগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। পরবর্তীতে সকলেই অনেক চেষ্টা করেও সাগরের আর কোন তথ্য সংগ্রহ করতে না পেরে কামরাঙ্গীরচর থানায় একটি সাধারন ডায়রী করেন এবং অধিনায়ক র্যাব-১০ বরাবর একটি অভিযোগ দাখিল করেন। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, গ্রেফতারকৃত আসামী সাগর সেনাবাহিনীর মেজরসহ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বাহিনীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে চাকুরির প্রলোভন এবং বিভিন্ন প্রকার ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে সাধারণ মানুষের নিকট হতে মোটা অংকের টাকা আতœসাৎ করে আসছিল। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ঢাকার আশুলিয়া থানায় প্রতারণাসহ একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।