কেরানীগঞ্জ সংবাদদাতা ইমরান হোসেন ইমুঃ
চাঁদার টাকা আত্মসাৎ করার কারণেই হত্যা করা হয় রাসেলকে।
ঢাকার কেরাণীগঞ্জে চাঞ্চল্যকর বন্ধুর নির্যাতনে বন্ধু খুন ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকান্ডের মূল হোতা রাব্বিসহ ১২ জন গ্রেফতার করেছে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা। বুধবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান।
তিনি জানান, গত ১০ জানুয়ারি রাত অনুমান ৮ টার দিকে রাসেলকে তার বন্ধু আফতাব উদ্দিন রাব্বি লোক মারফত দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার তেলঘাটে পারভিন টাওয়ারের নিচ তলায় তার নিজ অফিসে ডেকে নিয়ে সেখানে উপস্থিত অন্যান্য বন্ধুরা রাব্বির নেতৃত্বে রাতভর রাসেলকে এলোপাথাড়িভাবে লাঠিসোঠা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে প্রচন্ড মারধর করে মারাত্মক জখম করে এবং কেচি দিয়ে রাসেলের মাথার চুল কেটে দেয়।
নির্যাতনের একপর্যায়ে রাত ০২ টার দিকে রাসেল গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে পড়লে রাব্বির নির্দেশে ৪/৫ জন লোক রাসেলকে অজ্ঞান অবস্থায় তার বাসায় পৌঁছে দেয় এবং রাসেলের স্ত্রীকে এ বিষয়ে থানা পুলিশ বা কাউকে ঘটনার বিষয়ে না জানানোর জন্য হুমকী প্রদান করে আসামীরা চলে যায়। পরদিন সকালে রাসেলের শারীরিক অবস্থা আরো অবনতি হলে তার স্ত্রী তাকে চিকিৎসার জন্য দ্রুত মিডফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকায় নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাসেলকে মৃত ঘোষনা করেন।
রাসেল মারা যাওয়ার পর রাব্বির অফিসে নিহত রাসেলকে নির্যাতনের বিভিন্ন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্য ও দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। আলোচিত এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহত রাসেলের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হাওলাদার বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় আফতাব উদ্দিন রাব্বিকে ০১ নম্বর আসামী করে ১৩ জন এজাহারনামীয়সহ অজ্ঞাতনামা ১০/১৫ জন আসামীর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
হত্যাকান্ডের সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে দক্ষিন কেরাণীগঞ্জ থানা পুলিশ হত্যার ঘটনাস্থল রাব্বির অফিসে গিয়ে হত্যাকান্ড সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন আলামত জব্দ করে। হত্যাকান্ডে জড়িত এজাহারনামীয় আসামী ছাড়াও তদন্তটিম ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ ও সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া নির্যাতনের বিভিন্ন ভিডিও পর্যালোচনা করে ঘটনায় জড়িত অন্যান্য আসামীদের সনাক্ত করে। পরবর্তীতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কেরানীগঞ্জ সার্কেল) শাহাবুদ্দিন কবীরের তত্ত্বাবধানে ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মাহাবুব আলম এর সার্বিক সহযোগীতায় দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার একটি আভিযানিক দল তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্যে ঝিনাইদহ জেলার মহেষপুর থানার বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বাঁশবাড়িয়া বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অত্র হত্যাকান্ডের মূল হোতা আফতাব উদ্দিন রাঝি সহ সজীব (৩৬), রাজীব (৩৫), হীরা (৩০), ফিরোজ (৩১)-দের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। অভিযানের ধারাবাহিকতায় গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভোলা জেলার লালমোহন থানায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত আসামী আলমগীর ওরফে ঠান্ডু (৩৯), আমির (৩৮), রনি (৩৫), দেলোয়ার দেলু (৩৭), শিপন (৩১), মাহফুজ (৩৬), রতন শেখ (২৮) সহ সর্বমোট ১২ জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে অত্র হত্যাকান্ডের কারণ সম্পর্কে জানা যায়, নিহত রাসেল রাব্বির বন্ধু ছিলো। কালিগঞ্জ এলাকায় রাসেল বিভিন্ন ব্যবসায়ীর নিকট থেকে রাব্বির নামে চার্দী তোলে কিন্তু রাসেল সেই টাকা রাব্বি ও তাদের অন্যান্য সহযোগীদের না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করে। মূলত আর্থিক লেনদেনকে কেন্দ্র করে ও পারস্পারিক মতবিরোধের জেরে রাব্বি ও তার সহযোগীরা রাসেলের উপর ক্ষুদ্ধ হয় এবং রাসেলকে উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করে। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় রাসেলকে মারার জন্য লোকজন দিয়ে রাসেলকে তার অফিসে ডেকে নিয়ে অফিস রুমে রাব্বি ও তার সহযোগীরা মিলে সারারাত রাসেলকে প্রচন্ড মারধর করে ও কেচি দিয়ে তার চুল কেটে দেয়। নির্যাতনের একপর্যায়ে রাসেল তার বন্ধু রাব্বিকে ‘আব্বা আব্বা’ বলে ডাকে ও বাঁচার জন্য আকুতি মিনতি করতে থাকে কিন্তু তার পরেও সবাই মিলে তাকে পালাক্রমে মারতে থাকায় রাসেল গুরুতর আহত হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। একপর্যায়ে রাব্বির লোকজন আহত রাসেলকে অচেতন অবস্থায় রাত ০২ ঘটিকার দিকে তার বাসায় স্ত্রীর কাছে দিয়ে আসে। পরদিন সকালে রাসেলকে চিকিৎসার জন্য মিডফোর্ড হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাসেল মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। হত্যাকান্ডে জড়িত অন্যান্য পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।
ভুক্তভোগী পরিবারের দাবী খুনি রাব্বি ক্ষমতাধর পরিবারের সন্তান, তার সাজা না হলে তারা নিরাপদ জীবন যাপন করতে পারবেনা। বিভিন্ন ভাবে তাদের হুমকিধামকি দিচ্ছে মামলা উঠিয়ে নিতে। আমরা রাব্বিসহ সকলের ফাঁসি চাই এবং যারা বাহিরে আছে তাদের দ্রুত গ্রেফতার দাবি করছি।
বাকি আসামিদের আটকের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার( কেরানীগঞ্জ সার্কেল) শাহাবুদ্দিন কবির।