সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ইজিবাইক চুরির ঘটনা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন চোরচক্র সংঘঠিতভাবে গরিব, অসহায় ও সাধারণ মানুষের একমাত্র আয়ের উৎস ইজিবাইক চুরি করে তাদের ক্ষতি সাধন করে আসছে। র্যাব উক্ত ইজিবাইক চোরচক্রদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার মাধ্যমে ইজিবাইক চুরি রোধকল্পে অভিযান অব্যহত রেখেছে। যার ধারাবাহিকতায় র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল গত ২৬ মার্চ ২০২৪ খ্রিঃ তারিখ নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার ও বন্দর এলাকায় একাধিক অভিযান পরিচালনা করে চোরাইকৃত ১৪টি ইজিবাইক উদ্ধার পূর্বক ইজিবাইক চোরচক্রের ০৫ জনকে গ্রেফতার করে। অতঃপর গ্রেফতারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১০ এর উক্ত আভিযানিক দল ইজিবাইক চোর চক্রটির সাথে সম্পৃক্ত পলাতক অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করতঃ অভিযান অব্যাহত রাখে।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ০৫ মে ২০২৪ খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক বিকাল ১৭:৩০ ঘটিকায় র্যাব-১০ উক্ত আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন হাসনাবাদ এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে। উক্ত অভিযানে আন্তঃজেলা ইজিবাইক চোর চক্রের অন্যতম মূলহোতা ১। মোঃ কবির (৫০), পিতা-মোঃ আব্দুল জব্বার, সাং-আটিগ্রাম, থানা-সিদ্ধিরগঞ্জ, জেলা-নারায়নগঞ্জসহ ০৩ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত অপর আসামিদের নাম ২। মোঃ দুলাল শিকদার (৫১), পিতা-মোঃ সাত্তার শিকদার, সাং-চরপাড়া, থানা-তালতলী, জেলা-বরগুণা ও ৩। মোঃ সেলিম (৪১), পিতা-মোঃ সিরাজ মিয়া, সাং-চনপাড়া, থানা-রূপগঞ্জ, জেলা-নারায়নগঞ্জ বলে জানা যায়। এ সময় তাদের নিকট হতে চোরাইকৃত ০৩টি ইজিবাইক ও ০১টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত মোঃ কবির ইজিবাইক চোর চক্রটির মূলহোতা এবং দুলাল শিকদার কবিরের প্রধান সহযোগী। দুলাল শিকদার ঢাকার কেরাণীগঞ্জ, শ্যামপুর ও যাত্রাবাড়ীসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে টার্গেট খুজে ও ইজিবাইক চুরের জন্য সুবিধাজনক স্থান নির্ধারণ করে কবিরকে জানায়। অতঃপর কবির দুলালকে নিয়ে তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী যাত্রাবাড়ী, ধোলাইপাড়, জুরাইন, হাসনাবাদ, কদমতলীসহ বিভিন্ন ইজিবাইক স্ট্যান্ডে গিয়ে তাদের পূর্বপরিকল্পিত ও সুবিধাজনক স্থানে যাওয়ার কথা বলে ইজিবাইক ভাড়া করে। এতে কোন ইজিবাইক চালক উক্ত স্থানে যেতে অস্বীকৃতি জানালে দুলাল ও শিকদার তাদেরকে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অধিক ভাড়া দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে রাজি করিয়ে নিয়ে যেত। অতঃপর তাদের সুবিধাজনক স্থানে পৌঁছামাত্র দুলাল ভাড়া দেওয়ার জন্য বিভিন্ন তালবাহান করে বিলম্ব করতে থাকে এবং অপরদিকে কবির বিভিন্ন চেতনানাশক ঔষধ ব্যবহার করে ঐ ইজিবাইক চালককে অজ্ঞান করে ফেলে রেখে তার ইজিবাইক নিয়ে দ্রæত ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে যেত।
পরবর্তীতে কবির ও দুলাল উক্ত চোরাইকৃত ইজিবাইক তাদের অপর সহযোগী মোঃ সেলিমের নিকট হস্তান্তর করত। সেলিম চোরাইকৃত বিভিন্ন ইজিবাইক তার হেফাজতে রেখে সেগুলোর রং, আকৃতি ও কাঠামো পরিবর্তন করে পার্শবর্তী জেলা নারায়ণগঞ্জসহ দূরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় ৩০,০০০-৪০,০০০ টাকায় বিনিময়ে বিক্রি করত। বিক্রয়লব্ধ অর্থ কবির, দুলাল ও সেলিম তারা সবাই মিলে ভাগ করে নিত।
জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, কবিরের নেতৃত্বে চক্রটি প্রায় ০১ বছর যাবৎ ঢাকার বিভিন্ন এলাকা হতে ইজিবাইক চুরি করে সেগুলোর রং, আকৃতি ও কাঠামো পরিবর্তন করে অনত্র বিক্রি করে আসছিল। এক্ষেত্রে তারা তাদের নির্ধারিত টার্গেটকে ফাঁদে ফেলার জন্য নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অধিক ভাড়া দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে রাজি করতো। পরবর্তীতে তাদের পরিকল্পিত স্থানে পৌঁছামাত্র বিভিন্ন চেতনানাশক ঔষধ ব্যবহার ইজিবাইক চালককে অজ্ঞান করে ইজিবাইক চুরি করত।
গ্রেফতারকৃত কবিরের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় ১টি চুরির মামলা এবং গ্রেফতারকৃত সেলিমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় চুরি, মাদক ও হত্যাসহ মোট ০৪টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করতঃ সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে ।