ফরিদপুরের বোয়ালমারির চাঞ্চল্যকর “যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে হত্যা” শীর্ষক ঘটনার প্রধান হত্যাকারী স্বামী বক্কার’কে ৭২ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১০, ফরিদপুর।
১। র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই দেশের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সব ধরণের অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। জঙ্গী, সন্ত্রাসী, সংঘবদ্ধ অপরাধী, ছিনতাইকারী, মাদক ব্যবসায়ী এবং অপহরন, ধর্ষণ ও হত্যাসহ, বিভিন্ন মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেফতারে র্যাব নিয়মিত অভিযান চালিয়ে আসছে। গোয়েন্দা নজরদারী ও আভিযানিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে র্যাব ইতোমধ্যেই জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
২। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ০৮ অক্টোবর ২০২৩ খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক রাত ২২:৩০ ঘটিকায় র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ফরিদপুর জেলার সালথা থানাধীন সোনারপুর বাজার এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে। উক্ত অভিযানে ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী থানার মামলা নং-০৫/২০০, তারিখ-০৫/১০/২০২৩ খ্রিঃ, ধারা- নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩) এর ১১(ক)/৩০। যৌতুকের জন্য স্ত্রী হত্যা মামলার প্রধান আসামি হত্যাকারী ভিকটিমের স্বামী বক্কার শেখ (৩৭), পিতা-মান্নান শেখ, সাং-সাতপাড়া, থানা-বোয়ালমারী, জেলা-ফরিদপুর’কে গ্রেফতার করে।
৩। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত আসামি বক্কার শেখ এর সাথে ভিকটিম জিয়াসমিন এর বিগত ১৫ বছর পূর্বে পারাবারিক সম্মতিক্রমে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে জিসান শেখ (১২) ও মুসলিমা (০৪) নামক একটি পুত্র সন্তান ও একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বিয়ের কয়েক বছর পর থেকে বক্কার শেখ যৌতুকের জন্য ভিকটিম জিয়াসমিনকে বিভিন্নভাবে শারিরীক নির্যাতন ও চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়। অতঃপর গত ২২/০২/২০২৩ খ্রিঃ তারিখে আসামি বক্কার শেখ ভিকটিম জিয়াসমিনকে মারাত্বকভাবে মারধর করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর হাড়ভাঙ্গা জখম করে। যার ফলে জিয়াসমিন আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৫ দিন যাবৎ চিকিৎসা গ্রহণ করেন। ভিকটিম জিয়াসমিন সুস্থ হওয়ার কিছুদিন পর আসামি বক্কার শেখ পুনরায় তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কুপরামর্শ ও সহযোগীতায় ভিকটিম জিয়াসমিনের হাত-পা বেঁধে ঘরের ভিতরে আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন করে এবং তার মাথার চুল কেটে ফেলে। পরবর্তীতে বক্কার শেখ ভিকটিম জিয়াসমিনের বাবাকে ফোন করে বলে যে, যদি সে তার মেয়ের সুখ-শান্তি চায় তাহলে সৌদিআরবে যাওয়ার জন্য তাকে (বক্কারকে) যৌতুক হিসেবে ৬,০০,০০০/- (ছয় লক্ষ) টাকা দিতে হবে। অতঃপর গত ২৯/০৯/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ ভিকটিম জিয়াসমিন তার বাপের বাড়ীতে গিয়ে তার বাবাকে নির্যাতনের ঘটনা খুলে বলে এবং তার স্বামীকে সৌদিআরবে যাওয়ার জন্য যৌতুক হিসেবে ৬,০০,০০০/- (ছয় লক্ষ) টাকা না দিলে ঐ বাড়ীতে তার আর সংসার করে হবে না। উক্ত ঘটনা শোনার পর জিয়াসমিনের বাবা তাকে বলে যে, তার সহায়-সম্পত্তি যা কিছু আছে সব বিক্রি করে হলেও সে জিয়াসমিনের স্বামীকে ৩,০০,০০০/- (তিন লক্ষ) টাকা ব্যবস্থা করে দিবে এবং এই কথাটি জিয়াসমিন যেন তার স্বামীকে জানায়।
৪। তার পরের দিন ০১/১০/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ মাঝ রাত আনুমানিক ০১:০০ ঘটিকায় উক্ত এলাকার আশপাশের লোকজন ভিকটিমের বাবাকে ফোন করে জানায় যে, আসামি বক্কার শেখ ও তার পরিবারের লোকজন যৌতুকের দাবিতে ভিকটিম জিয়াসমিনকে বেধরক মারধর করছে। উক্ত সংবাদ প্রাপ্তির পর ভিকটিমের বাবা ও তার পরিবারের কয়েজনকে নিয়ে আনুমানিক রাত ০৩:৩০ ঘটিকায় আসামি বক্কার শেক এর বাড়ীতে পৌছালে সেখানে গিয়ে দেখতে পায় যে উক্ত বাড়ীতে কেউ নেই। অতঃপর তারা স্থানীয় ও আশপাশের কয়েকজন লোকসহ ভিতরে গিয়ে দেখতে পায় ভিকটিম জিয়াসমিন এর শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্বক জখমের চিহ্ন ও গলায় রশি পেঁচানো অবস্থায় ভিকটিম জিয়াসমিনের মৃত দেহের অর্ধেক শরীর চৌকির নিচে এবং অর্ধেক শরীর চৌকির বাহিরে পড়ে আছে। পরবর্তীতে পুলিশকে সংবাদ দিলে বোয়ালমারী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করতঃ লাশ ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।
৫। হত্যাকান্ডের পর মৃত জিয়াসমিনের পিতা আজিজার মোল্যা (৫১) বাদি হয়ে ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী থানায় আসামি বক্কার শেখ ও তার পরিবারের আরো ০৫ জনের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে হত্যার ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা রুজুর পর থেকে হত্যাকাÐে জড়িত সকল আসামিরা আত্মগোপনে চলে যায়। ইতোমধ্যে হত্যাকাÐের ঘটনাটি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল।
৬। উক্ত যৌতুকের জন্য নির্মমভাবে স্ত্রীকে হত্যাকাÐের ঘটনাটি জানতে পেরে র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল উক্ত হত্যাকাÐে জড়িত আসামিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১০ এর উক্ত আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় আসামি বক্কারশেখ’কে ৭২ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
৭। গ্রেফতারকৃত আসামিকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।