১। র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই দেশের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সব ধরণের অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। জঙ্গী, সন্ত্রাসী, সংঘবদ্ধ অপরাধী, ছিনতাইকারী, মাদক ব্যবসায়ী এবং অপহরন, ধর্ষণ ও হত্যাসহ, বিভিন্ন মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেফতারে র্যাব নিয়মিত অভিযান চালিয়ে আসছে। গোয়েন্দা নজরদারী ও আভিযানিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে র্যাব ইতিমধ্যেই জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
২। মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর এলাকায় বসবাসকারী ভিকটিম গাজী দিল হোসেন নিরব (১৭), পিতা-মৃত জব্বার আলী বেপারী গত ০৮ ফেব্রæয়ারি ২০২৪ খ্রিঃ তারিখে মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানাধীন কামারগাঁও আলহাজ্ব কাজী ফজলুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠানে যায়। উক্ত অনুষ্ঠানের এক পর্যায় কয়েকজন বখাটে ছেলে অজ্ঞাত একজন ছাত্রীকে ধাক্কা দেয় এবং বিভিন্নভাবে উত্ত্যাক্ত করে। বিষয়টি দেখে ভিকটিম নিরব প্রতিবাদ করলে উক্ত্যাক্তকারী বখাটে ছেলেরা নিরবের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়ায় এবং বিভিন্ন প্রকার গালাগালি করতে থাকে। অতঃপর অনুষ্ঠানে উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ তাৎক্ষনিক বিষয়টি মিমাংসা করে দিলেও উক্ত বিষয় নিয়ে বখাটে ছেলেরা নিরবের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে পরসপর যোগসাজসে নিরবকে উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ০৯/০২/২০২৪ খ্রিঃ তারিখ বিকালে ভিকটিম নিরব প্রাইভেট পড়া শেষ করে শ্রীনগর থানাধীন কামারগাঁও চৌধুরী বাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উত্তর পাশ্বের্র স্কুলে ভবনের সিড়িঁতে বসে তার বন্ধুদের সাথে গল্প করতে থাকে। অতঃপর বিকাল আনুমানিক ১৬:৩৫ ঘটিকায় শাহীন, রোমান, রায়হান, জাহিদ ও আবির উক্ত ইভটিজিংকে কেন্দ্র করে বিরোধের জের ধরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাদের সাথে থাকা আরো ২০-২১ জন সহযোগীদের নিয়ে দেশীয় অস্ত্র (দা, চাপাতি ও চাকু) নিয়ে ভিকটিম নিরবের উপর অতর্কিত আক্রমন করে। এ সময় তারা দা, চাপাতি ও চাকু দিয়ে নিরবের মাথা, বুক, পিঠ ও পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাথাড়ি কুটিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। নিরব প্রাণ বাঁচাতে দোড়ে পালানোর চেষ্টা করলে উক্ত স্কুলের রাস্তার পাশে একটি খালের মধ্যে পড়ে যায়। অতঃপর আসামীরা নিরবের মৃত্যু নিশ্চত করে ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন নিরবকে গুরুতর আহত ও অজ্ঞান অবস্থায় চিকিৎসার জন্য শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিভিন্ন পরীক্ষ নিরীক্ষ করে নিরবকে মৃত ঘোষনা করেন।
৩। উক্ত ঘটনায় ভিকটিম নিরবের মা মোসাঃ দিলারা @ নিপা আক্তার (৪০) বাদি হয়ে মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানায় চাঞ্চল্যকর নিরব হত্যাকাÐে সরাসরি জড়িত শাহীন, রোমান, রায়হান, জাহিদ ও আবিরসহ ১৯ জন ও অজ্ঞাতনামা আরো ৬/৭ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং-১১/৪২, তারিখ-১০/০২/২০২৪ খ্রিঃ, ধারাঃ ৩০২/৩৪ দণ্ড বিধি। ইতোমধ্যে ঘটনাটি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত হলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। ঘটনাটি জানতে পেরে র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
৪। এরই ধারাবাহিকতায় অদ্য ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ খ্রিঃ তারিখ বিকালে র্যাব-১০ এর উক্ত আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর ইভটিজিং এর ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিরব’কে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় মামলা রুজুর ০৬ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ০৫ জন আসামীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের নাম ১। মোঃ শাহীন সিকদার (১৬), পিতা-লিটন সিকদার, সাং-উত্তর কামারগাঁও, ২। মোঃ রোমান মৃধা (১৭), পিতা-আজিজুল মৃধা, সাং-জগন্নাথ পট্টি, ৩। মোঃ রায়হান (১৭), পিতা-শেখ খলিল, সাং-আলামিন, কাদির কান্দা, ৪। মোঃ জাহিদ (১৭), পিতা-মোঃ মজিবুর, সাং-আলামিন, কাদির কান্দা ও ৫। মোঃ আবির (১৭), পিতা-মোঃ আজহার শেখ, সাং-আলামিন, কাদির কান্দা, সর্ব থানা-শ্রীনগর, জেলা-মুন্সিগঞ্জ বলে জানা যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীরা উক্ত হত্যাকাণ্ডে তাদের সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
৫। গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।