১। র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই দেশের সাবির্ক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সব ধরণের অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। জঙ্গী, সন্ত্রাসী, সংঘবদ্ধ অপরাধী, ছিনতাইকারী, মাদক ব্যবসায়ী, অপহরন ও হত্যাসহ বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর মামলার আসামীদের গ্রেফতারে র্যাব নিয়মিত অভিযান চালিয়ে আসছে। গোয়েন্দা নজরদারী ও আভিযানিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে র্যাব ইতিমধ্যেই জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
২। গত ২৭ জুন ২০২৩ খ্রিঃ তারিখ ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন হাসনাবাদ এলাকায় বসবাসকারী মোঃ ফিরোজ (২২) নামক একজন ইজিবাইক চালক প্রতিদিনের ন্যায় জিবিকা নির্বাহের জন্য ইজিবাইক নিয়ে বের হয়। আনুমানিক ১৭:০০ ঘটিকা হতে তার পরিবারের লোকজন ফিরোজ এর সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে তাকে বিভিন্ন জায়গায় খোজাখুঁজি করতে থাকে। অতঃপর কোথায় তার কোন সন্ধান না পাওয়ায় ফিরোজের বাবা কিবরিয়া গাজী গত ২৮/০৬/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়রী করেন। যার জিডি নং- ১৬৬৯ তারিখ ২৮/০৬/২০২৩ খ্রিঃ। ঘটনাটি জানতে পেরে র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল নিখোজ ইজিবাইজ চালক ফিরোজ’কে উদ্ধার করতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে।
৩। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১০ এর উক্ত আভিযানিক দল তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল ০৪ জুলাই ২০২৩ খ্রিঃ তারিখ ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ১। মোঃ শফিকুল ইসলাম (৪৫), জেলা- পটুয়াখালী, ২। নুর ইসলাম (৩২), জেলা- পটুয়াখালী, ৩। গোলাম রাব্বি (২৫), জেলা- খুলনা, ৪। মোঃ আব্দুর রহমান (২৭), জেলা- পটুয়াখালীদেরকে গ্রেফতার করে। তাদের দেয়া তথ্যমতে একই তারিখ গোপালগঞ্জের জেলার কাশিয়ানি এলাকা হতে ৫। মোছাঃ শীমা আক্তার (২৮), জেলা- পটুয়াখালী এবং অদ্য ০৫ জুলাই ২০২৩ খ্রিঃ তারিখ মাদারীপুরের শিবচর এলাকা হতে শাহনাজ (৩৭)’কে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের নিকট থেকে ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত চেতনানাশক মিশ্রিত বিস্কুট, চেতনানাশক ঔষধ, ভিকটিম ফিরোজ এর মোবাইল ফোন ও ০১টি চোরাইকৃত সিএনজি উদ্ধার করা হয়।
৪। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গত ২৭/০৬/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ শফিকুল, নুর ইসলাম, গোলাম রাব্বি, আব্দুর রহমান, শীমা আক্তার ও শাহনাজ ইজিবাইক ছিনতাই করার উদ্দেশ্যে ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন হাসনাবাদ এলাকায় অবস্থান করে। নুর ইসলাম, গোলাম রাব্বি, শীমা ও শাহনাজ হাসনাবাদ গরু হাটে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ভিকটিম ফিরোজ এর ইজিবাইক ভাড়া করে। গরুর হাটে যাওয়ার পর নুর ইসলাম ও গোলাম রাব্বি’কে ইজিবাইক চালক ভিকটিম ফিরোজের সাথে চা বিস্কুট খাওয়ার কথা বলে শীমা ও শাহনাজ গরু হাটে চলে যায়। অতঃপর নুর ইসলাম ও গোলাম রাব্বি তাদের কাছে থাকা চেতনানাশক ঔষধ মেশানো বিস্কুট এর অনুরুপ এক প্যাকেট বিস্কুট নিকস্থ চায়ের দোকান থেকে ক্রয় করে। পরবর্তীতে তারা কৌশলে উক্ত বিস্কুটের প্যাকেটটি পরিবর্তন করে চেতনানাশক ঔষধ মেশানো বিস্কুট ইজিবাইক চালক ফিরোজ’কে খাওয়ায়।
৫। পরবর্তীতে নুর ইসলাম ও গোলাম রাব্বি ভিকটিম ফিরোজসহ ইজিবাইক এ গিয়ে বসে। অতঃপর ফিরোজ এর শরীরে চেতনানশক ঔষধের ক্রিয়া শুরু হলে তারা ইজিবাইকসহ ফিরোজ’কে উক্ত এলাকা হতে অন্যত্র সরিয়ে কাউটাইল এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার পর নুর ইসলাম ও গোলাম রাব্বি ভিকটিম ফিরোজকে বেশামাল অবস্থায় গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে ইজিবাইক নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার পাগলা এলাকায় নিয়ে গিয়ে তাদের দলনেতা শফিকুল ইসলাম এর নিকট হস্তান্তর করে। শফিকুল ইসলাম উক্ত ইজিবাইকটি শহিদ নামক একজন ব্যক্তির নিকট ৩০,০০০/- টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেয় বলে জানা যায়।
৬। গ্রেফাতরকৃত শফিকুল ইসলাম উক্ত অজ্ঞান পার্টি চক্রটির দলনেতা। সে পেশায় একজন সিএনজি চালক। উক্ত পেশার আড়ালে সে চেতনানাশক ঔষধ খাইয়ে সিএনজি/ ইজিবাইক ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা ও নেতৃত্ব প্রদান করে থাকে। তার নিকট থেকে চোরাইকৃত সিএনজিটি উদ্ধার করা হয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে মাদক, চুরি, অসাধুভাবে চোরাই মালামাল বেচাকেনাসহ ০৪ মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
৭। গ্রেফাতরকৃত নুর ইসলাম পেশায় একজন ট্রাক গাড়ির হেলপার। সে শফিকুল এর নেতৃত্বে সিএনজি/ইজিবাইক ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে চালকদের চেতনানাশক ঔষধ মেশানো বিস্কুট খাওয়ানোর দায়িত্ব পালন করে বলে জানা যায়।
৮। গ্রেফাতরকৃত গোলাম রাব্বি পেশায় একজন ইজিবাইক চালক। সে শফিকুল এর নেতৃত্বে ইজিবাইক ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে চালকদের চেতনানাশক ঔষধ মেশানো বিস্কুট খাওয়ানো ও ইজিবাইক নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পালন করে বলে জানা যায়।
৯। গ্রেফাতরকৃত আব্দুর রহমান পেশায় একজন সিএনজি চালক। সে শফিকুল এর নেতৃত্বে ছিনতাইকৃত সিএনজি চালানোর দায়িত্ব পালন করে। তার নিকট থেকে ভিকটিম ফিরোজ এর মোবাইলটি উদ্ধার করা হয় বলে জানা যায়।
১০। গ্রেফাতরকৃত শাহনাজ বিস্কুটের ক্রিমের সাথে মিশ্রণ করার জন্য বিক্রয় নিষিদ্ধ চেতনানশক ঔষধ (খড়ৎধুবঢ়ধস ঞধনষবঃং ও.চ. ২সম) অবৈধভাবে দেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা হতে সংগ্রহ করত। সে শফিকুল ইসলাম এর সাথে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকত এবং সেখানে থেকে তারা বিস্কুটের সাথে চেতনানশক ঔষধ মিশিয়ে ইজিবাইক/সিএনজি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করত বলে জানা যায়।
১১। গ্রেফাতরকৃত শীমা আক্তার, শাহনাজের সাথে বিস্কুটের ক্রিমের সাথে বিক্রয় নিষিদ্ধ চেতনানশক ঔষধ মেশানো ও সিএনজি/ইজিবাইক ভাড়া করে তাদের পূর্ব-পরিকল্পিত স্থানে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পালন করে বলে জানা যায়। শীমার নিকট থেকে ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত চেতনানাশক মিশ্রিত বিস্কুট ও চেতনানাশক ঔষধ উদ্ধার করা হয়।
১২। গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।