বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৬ অপরাহ্ন

স্ত্রীকে নদীতে ফেলে হত্যার পর নিখোঁজের থানায় জিডি স্বামীর

কেরানীগঞ্জ সংবাদদাতা মোঃ ইমরান হোসেন ইমু
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ১৯৮ বার পড়া হয়েছে

বিয়ের মাত্র চার মাসের মাথায় স্ত্রী ফারজানাকে (২২) বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দিয়ে হত্যার পর কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় এসে নিখোঁজের জিডি করেন স্বামী রনি মিয়া (২৫)। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। পুলিশের তদন্তে ধরা পড়েছেন তিনি। গ্রেফতার করা হয়েছে রনিকে। রোববার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান।

 

পুলিশ সুপার জানান, গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে ফারজানা নামে এক নারী স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে- এই মর্মে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি জিডি করা হয়। শাশুড়িকে (ফারজানার মা) সঙ্গে নিয়ে ১৬ সেপ্টেম্বর জিডি করেন ফারজানার স্বামী রনি মিয়া। জিডির তদন্তকালে রনি মিয়া পুলিশকে জানান, ফারজানার বিয়ের আগে নাদিম নামে এক ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এ বিষয়ে কথা কাটাকাটি হলে ফারজানা রাগ করে বাসা থেকে চলে গেছে।

 

পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, ফারজানা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে শিক্ষানবিশ নার্স হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। একই হাসপাতালে তার সাবেক প্রেমিক নাদিমও শিক্ষানবিশ নার্স হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। মূলত নাদিমকে ফাঁসাতে রনি পরিকল্পিতভাবে এ তথ্য পুলিশের কাছে তুলে ধরে।

 

কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন কবীর জানান, তদন্তের একপর্যায়ে বৃহস্পতিবার বিকালে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার জাজিরা নামারবোর্ড ঘাটের বাদশা বেপারীর ইটখোলার পশ্চিম পাশে পানি ও কচুরিপানার ভেতরে ভাসমান অর্ধগলিত অজ্ঞাতনামা ২২-২৩ বছর বয়সি নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই নারীর পরিহিত কালো বোরকা, সবুজ সালোয়ার এবং দেহের গঠন দেখে রনি মিয়া জানান, মৃতদেহটি তার নিখোঁজ স্ত্রী ফারজানার। শনিবার এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা করেন।

 

কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি মামুনুর রশীদ জানান, ফারজানার মৃতদেহ পাওয়ার পর মামলা নাটকীয় মোড় নেয়। কেননা ফারজানা নিখোঁজ হওয়ার আগে তার সর্বশেষ অবস্থান ছিল কেরানীগঞ্জের বছিল ব্রিজ। কিন্তু ফারজানার লাশ পাওয়া যায় ১৫ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার জাজিরা এলাকায়। এ বিষয়ে পুলিশ ফারজানার স্বামী রনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি একেক সময় একেক তথ্য দেন।

 

অপরদিকে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে জানা যায়, ফারজানার স্বামী রনি মিয়া ঘটনার রাতে বছিলা ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছিলেন। এমতাবস্থায় পুলিশ রনিকে গ্রেফতার করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি কিভাবে ফারজানাকে হত্যা করে লাশ গুম করেছেন সেই বিষয়ে পুলিশকে তথ্য দেন।

 

রনি জানান, গত ১৫ সেপ্টেম্বর সকালে স্ত্রী ফারজানার পুরাতন প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ হয়। এর আগেও তাদের মধ্যে একাধিকবার ঝগড়া বিবাদ হয়েছে। ঘটনার দিন ফারজানা তার ঘর করবে না এমনকি তাকে ডিভোর্স দিয়ে দেবে বলে জানান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সেদিনই ফারজানাকে হত্যার সূক্ষ্ম একটি পরিকল্পনা করেন রনি। রনি ছিলেন নৌবাহিনীর সাবেক সদস্য। চাকরির তিন মাসের মাথায় তিনি নৌবাহিনী থেকে চলে আসেন। এরপর তিনি আটিবাজার এলাকায় কসমেটিকসের দোকান দেন। ফারজানাকে হত্যা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলেন। এতে রাজি হন ফারজানা। ফারজানাকে নিয়ে বছিলা ব্রিজ সংলগ্ন নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির পেছনে নদীর নির্জন ও গভীর জলাধারের কাছে নিয়ে প্রেমালাপ শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর পূর্বকরিকল্পনা অনুযায়ী রনি মিয়া ফারজানাকে অত্যন্ত জোরে ধাক্কা দিয়ে গভীর পানিতে ফেলে দেন। তিনি সাঁতার জানতেন না। নদীতে ছিল প্রচণ্ড স্রোত, ফারজানা ছিল বোরকা পরিহিত। সবমিলিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই ফারজানা পানিতে তলিয়ে যান। তারপর রনি ঘটনাস্থল থেকে চলে আসেন এবং আত্মীয়স্বজনদের ফোন দিয়ে জানান, ফারজানা ঝগড়া করে বাসা থেকে বের হয়ে তার সাবেক প্রেমিকের কাছে চলে গেছেন।

 

ওসি আরও জানান, যেহেতু রনি মিয়া নৌবাহিনীর সাবেক সদস্য সেহেতু পানির স্রোত সম্পর্কে তার ভালো ধারণা ছিল। আর এ কারণেই সাঁতার না জানায় ফারজানাকে পানিতে ফেলে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

 

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আমীনুল ইসলাম, কেরানীগঞ্জ সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন কবীর, কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর