মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২০ অপরাহ্ন

আলোচিত মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত ও যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক সন্ত্রাসী শুক্কুর আলী @সোহাগ’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০

কেরানীগঞ্জ সংবাদদাতা মোঃ ইমরান হোসেন ইমু।
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ১০৯ বার পড়া হয়েছে

১। র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র‌্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনী, বিপুল পরিমান অবৈধ অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার, ছিনতাইকারী, অপহরণ ও প্রতারকদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে সংগঠিত চাঞ্চল্যকর এবং আলোচিত অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে র‌্যাব জনগনের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

২। গত ১২ মার্চ ২০০২ তারিখ রাজধানী মোহাম্মদপুরের শ্যামলী এলাকায় ছিনতাইকারীদের গুলিতে কর্তব্যরত অবস্থায় একজন আনসার সদস্য ফজলুল হক গুলিবৃদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয় এবং একজন পুলিশ সদস্য গুরুতর জখম হয়। পরবর্তীতে তাদেরকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আনসার সদস্য ফজলুল হককে মৃত ঘোষনা করেন। উক্ত ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবল আকমান হোসেন বাদী হয়ে রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুর থানায় সন্ত্রাসী শুক্কুর আলী @সোহেলসহ ০৩ জনের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং-৬৬, তারিখ-১২/০৩/২০০২ইং, ধারা-৩৫৩/৩৩৩/৩০৭/৩০২ পেনাল কোড। মামলা রুজুর বিষয়টি জানতে পেরে আসামিরা আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত শুক্কুর আলীসহ অপর আসামিগণ জামিনে মুক্ত হয়ে পুনরায় আত্মগোপনে চলে যায়। মামলার তদন্ত শেষে গত ৩১ মার্চ ২০০৩ তারিখ উক্ত আসামিদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে মোহাম্মদপুর থানার অভিযোগপত্র নং-১৭০, তারিখ- ৩১ মার্চ ২০০৩ তারিখ মূলে অভিযোগ পত্র দাখিল করা হয়। অতঃপর বিজ্ঞ আদালত বিচারকার্য সমাপ্ত করে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখ মামলার ০৩ জন আসামিকেই মৃত্যুদন্ড প্রদান করে সকল আসামিদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডাদেশ পরোয়ানা জারী করেন। একই মামলায় পুলিশ কনস্টেবল আবদুল জলিল ফরাজীকে হত্যাচেষ্টার দায়ে আসামি শুক্কুর আলী @সোহেলকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাস সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করেন। উক্ত মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে র‌্যাব।

৩। এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‌্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের বিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় রাজধানীর সাভার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আলোচিত ২০০২ সালে কর্তব্যরত আনসার সদস্যকে গুলি করে হত্যার দায়ে মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত ও পুলিশ সদস্যকে হত্যাচেষ্টার দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি শুককুর আলী @সোহেল @সোহাগ (৩৮), পিতা-বাবুল মিয়া @বাবুল চোরা, ভোলা সদর, ভোলা’কে গ্রেফতার করে।

৪। গ্রেফতারকৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ঘটনার দিন গত ১২ মার্চ ২০০২ তারিখ দুপুরে শুক্কুর আলী তার অপর দুই সহযোগীদের নিয়ে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে রাজধানী মোহাম্মদপুরের শ্যামলী এলাকায় ‘দূর দূরান্ত’ নামক একটি বাস কাউন্টারের সামনে অবস্থান করে। অতঃপর শুক্কুর আলী ও তার সহযোগীরা মিলে অজ্ঞাত একজন ভিকটিমকে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। তখন উক্ত এলাকায় কর্তব্যরত পুলিশ কনস্টেবল আকমান হোসেন, কনস্টেবল আব্দুল জলিল ফরাজী ও আনসার সদস্য ফজলুল হক দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে ছিনতাইকারী শুক্কুর আলীসহ ০৩ জনকে আটকের চেষ্টা করলে গ্রেফতারকৃত শুক্কুর আলী ও তার অপর সহযোগীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের কাছে থাকা রিভলভার দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপর এলোপাথাড়ি গুলি করে। আনসার সদস্য ফজলুল হক গুলিবৃদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয় এবং একজন পুলিশ সদস্যকে দেশিয় অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে। এসময় অপর পুলিশ সদস্য আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি করলে শুক্কুর আলী ও তার অন্যান্য সহযোগীরা কৌশলে ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে যায়।

৫। গ্রেফতারকৃত শুক্কুর আলী ১০ বছর বয়স থেকেই বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে সে রাজধানীর মোহাম্মদপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই, ডাকাতি, হত্যা, অপহরণ ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতো বলে জানা যায়। সে আনসার সদস্য ফজলুল হত্যাকান্ডের ঘটনায় আইন-শৃংখলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে প্রায় সাড়ে ৩ বছর কারাভোগের পর জামিনে বের হয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। গ্রেফতারকৃত শুক্কুর আলী চট্টগ্রামসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার এড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ ও নাম পরিবর্তন করে কিছুদিন পর পর তার অবস্থান পরিবর্তন করতো। গ্রেফতারকৃত শুক্কুর আলী নতুন ব্যবহার করে ছিনতাই, অপহরণ ও মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম করতো বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃত শুক্কুর আলী ইতিপূর্বে মাদক সংক্রান্ত মামলায় প্রায় ০৪ বছর, অস্ত্র সংক্রান্ত মামলায় প্রায় ০৫ বছর ও অপহরণসহ বিভিন্ন মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, ডাকাতি ও মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে ১৫টির অধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃত শুক্কুর আলী সাভার এলাকায় আত্মগোপনে থাকাবস্থায় র‌্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়।

৬। গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর