মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৫ অপরাহ্ন

প্রাইভেটকার/মাইক্রোতে যাত্রী সেজে চেতনানাশক ওষুধ ব্যবহার করে অজ্ঞান করে ছিনতাই; কুখ্যাত মামা পার্টির মূলহোতা শাহীন রানা @তজ্জম সহ অজ্ঞান পার্টি চক্রের ০৫ জনকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা হতে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০

কেরানীগঞ্জ সংবাদদাতা মোঃ ইমরান হোসেন ইমু।
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ১০৯ বার পড়া হয়েছে

১। এলিট ফোর্স হিসেবে র‌্যাব আত্মপ্রকাশের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আইনের শাসন সমুন্নত রেখে দেশের সকল নাগরিকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার লক্ষে অপরাধ চিহ্নিতকরণ, প্রতিরোধ, শান্তি ও জনশৃংখলা রক্ষায় কাজ করে আসছে। জঙ্গিবাদ, খুন, ধর্ষণ, নাশকতা এবং প্রতারণাসহ বিভিন্ন ধরণের অপরাধী চক্রের সাথে সম্পৃক্ত অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র‌্যাব সদা সচেষ্ট রয়েছে। এছাড়াও র‌্যাব বিভিন্ন সময়ে অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টিসহ বিভিন্ন চক্রকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে এসে জনগণের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

২। গত ২৬ জুন ২০২৩ খ্রিঃ তারিখ ফরিদপুর জেলার ভাংগা এলাকায় মোঃ শাহিন রানা @তজ্জম ও মোঃ মফিজুল ইসলাম @ ইসলাম সহ আরো অন্যান্য আসামিরা যাত্রী সেজে মোঃ সাদ্দাম শেখ (৩৪) নামক একজন ইজিবাইক চালকের ইজিবাইকটি ভাড়া করে। তারা ইজিবাইক চালক সাদ্দামকে মারধর করে এবং একপর্যায় চেতনানাশক ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে অচেতন করে একটি মেহগনি বাগানে সাদ্দামকে অচেতন ও আহত অবস্থায় ফেলে রেখে ইজিবাইকটি ছিনতাই করে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ঐদিন আনুমানিক রাত ২০:৩০ ঘটিকায় ভিকটিম সাদ্দাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ফরিদপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়াও আসামিরা ভিকটিমের পরিবারের নিকট হতে ছিনতাইকৃত ইজিবাইকটি ফেরত দেওয়ার কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিকাশ নম্বরে মোট- ৩৫,০০০/- (পয়ত্রিশ হাজার) টাকা আত্মসাৎ করেছিল বলে জানা যায়। এই হত্যাকান্ডের ঘটনা তদন্তকালে মামা পার্টি চক্রটি সম্পর্কে জানা য়ায়। এই মামা পার্টির মূলহোতা মোঃ শাহিন রানা @তজ্জম এবং উক্ত পার্টির সক্রিয় সদস্য ১০ জন বলে জানা যায়

৩। জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাব-১০ জানতে পারে যে, মামা পার্টি খ্যাত একটি ছিনতাইকারী চক্র দীর্ঘদিন যাবৎ গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, মাদারিপুরসহ রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় প্রাইভেটকার/মাইক্রো ভাড়া করে যাত্রী সেজে চেতনানাশক ওষুধ ব্যবহার করে ছিনতাইসহ সাধারণ মানুষের নিকট হতে সর্বস্ব লুট করে আসছিল।

৪। এরই ধারাবাহিকতায় অদ্য ১৩ ফেব্রæয়ারি ২০২৪ খ্রিঃ তারিখ মাঝরাতে র‌্যাব-১০ এর উক্ত আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানাধীন শনিরআখড়া এলাকায় একাধিক অভিযান পরিচালনা করে মামা পার্টি খ্যাত ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতা ১। মোঃ রানা @ মোঃ শাহীন @ শাহীন রানা (৪৯), পিতা-মৃত শামছুর রহমান, সাং-শিরোমনি, থানা-খানজাহান আলী, জেলা-খুলনা, তার অন্যান্য সহযোগী ২। মোঃ মফিজুল ইসলাম @ মোঃ ইসলাম @ ইসলাম মিয়া (৪৮), পিতা-মোঃ আব্দুর রহিম, সাং-হরিয়াশা, থানা-জাজিরা, জেলা-শরীয়তপুর, ৩। মোঃ সাগর @ হাবিবুর রহমান শেখ @ মোঃ হাবিব (৫১), পিতা-মৃত আঃ খালেক, সাং-ঘটমাঝি, থানা-মাদারীপুর সদর, জেলা-মাদারীপুর, ৪। মোঃ ফারুক আহমদ @ মোঃ ফারুক মিয়া @ মোঃ ফারুক (৩৪), পিতা-আব্দুল খালেক, সাং-সুজানগর, থানা-বড়লেখা, জেলা-মৌলভীবাজার, ও ৫। মোঃ আবুল কালাম (৫৩), পিতা-মৃত খাদেম আলী সর্দার, সাং-সুরেশ^র, থানা-নড়িয়া, জেলা-শরীয়তপুর’দের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এসময় তাদের নিকট হতে ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত ০১টি হাইস গাড়ি ও ০১টি করোলা প্রাইভেট কার, ০১টি হাতকড়া, চেতনা নাশক ঔষধ ( চার পাতার মোট ৪০টি) ,০২টি সুইচ গিয়ার চাকু, ০২টি স্টীলের চাকু, ০১টি ক্ষুর, ০৬টি পুরাতন টাচ মোবাইল ফোন, ০৫টি পুরাতন বাটন মোবাইল  ও নগদ- ১,৬০০/- (এক হাজার ছয়শত) টাকা উদ্ধার করা হয়।

৫। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত শাহিন রানা চক্রটির মূল পরিকল্পনাকারী এবং তার নেতৃত্বে চক্রটি দীর্ঘদিন যাবৎ গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, মাদারিপুর ও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রাইভেট কার/মাইক্রো ভাড়া করে যাত্রী সেজে চেতনানাশক ওষুধ ব্যবহার করে ছিনতাই করে আসছিল। তাদের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রথমে তারা ছিনতাইয়ের জন্য উপযুক্ত ও নির্জন রুট সিলেক্ট করতো। এক্ষেত্রে তারা রাত ০৩:০০ ঘটিকা হতে সকাল ০৭:০০ ঘটিকার মধ্যে যেকোন সময় এবং নির্জন রুটকে বেছে নিতো। তারপর কখনও মফিজুলের প্রাইভেটকার ব্যবহার করতো আবার কখনও মফিজুলের মাধ্যমে অন্য কোন প্রাইভেটকার/মাইক্রো ভাড়া নিতো। অতঃপর মফিজুল উক্ত গাড়ি চালাতো এবং শাহিন যাত্রী সেজে মফিজুলের পাশে বসে থাকতো। অন্যানরা তাদের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী নির্বাচিত রুটের ০১-০২ কিলোমিটার পরপর যাত্রী বেশে অবস্থান করতো। পরবর্তীতে সবাই একত্রিত হওয়ার পর ভিকটিমকে কখনও দেশীয় অস্ত্রের ভয়ভীতি দেখিয়ে মারধর করে আবার কখনও চেতনানাশক ওষুধ ব্যবহার করে অচেতন করে ভিকটিমের সবকিছু লুট করে তাদের সুবিধাজন যে কোন নির্জন স্থানে ভিকটিমকে ফেলে রেখে সেখান থেকে পালিয়ে যেত বলে জানা যায় ।

৬। গ্রেফতারকৃত মোঃ শাহিন রানা @তজ্জম মামা পার্টি চক্রটির দলনেতা। শাহিন দীর্ঘদিন যাবৎ রাজধানীর ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই, ডাকাতি ও মলম পার্টির সক্রিয় সদস্য হিসেবে অপরাধমূলক কর্মকান্ড করে আসছে। সে উক্ত চক্রটির মাস্টার হিসেবে পরিচিত ছিল। সাধারণ লোকজনদের গাড়িতে যাত্রী সেজে মলম, চেতনা নাশক ঔষধ ও দেশীয় অস্ত্রে দেখিয়ে যাত্রীদের টাকা-পয়সা ও বিভিন্ন মূল্যবান মালামাল ছিনতাই করতো। এছাড়াও জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় শাহিন ২০০০ সালে একটি চুরির মামলায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে ০৫ বছর কারাভোগ করে ছিলো। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ ০৫টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

৭। গ্রেফতারকৃত মোঃ মফিজুল ইসলাম @ ইসলাম প্রায় পেশায় একজন ড্রাইবার। সে বিভিন্ন কোম্পানীর গাড়ি চালক হিসেবে কর্মরত ছিলো। সে বিভিন্ন ব্যক্তির গাড়ি ভাড়া করে অপরাধ করে আসছিল । পরবর্তীতে সে মলম পার্টি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ডাকাতি, ছিনতাই ও মাদক মামলাসহ ০৩টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

৮। গ্রেফতারকৃত মোঃ সাগর @ হাবিবুর রহমান শেখ @ মোঃ হাবিব রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ড্রাইভার হিসেবে কাজ করতো । উক্ত পেশার আড়ালে সে মামা পার্টিরূ সক্রিয় সদস্য ছিল হিসেবে কাজ করতো।  সে যাত্রীদের চেতনা নাশক ওষুধ ব্যবহার করে ও দেশীয় অস্ত্রে ভয় দেখিয়ে যাত্রীদের নিকটে থাকা বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাই করতো। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও হত্যা চেষ্টাসহ ০৪টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

৯। গ্রেফতারকৃত মোঃ ফারুক আহমদ @ মোঃ ফারুক মিয়া @ মোঃ ফারুক রাজধানীর ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় রেন্ট-এ কার এর গাড়ি চালাতো। উক্ত পেশার আড়ালে সে রাজধানীর সাইনবোর্ড, কদমতলীসহ বিভিন্ন এলাকায় ভোর রাতে যাত্রীদের গাড়িতে তোলে বিভিন্ন মলম, চেতনা নাশক ওষুধ ব্যবহার করে ও দেশীয় অস্ত্রে ভয় দেখিয়ে যাত্রীদের নিকটে থাকা বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাই করতো। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই ও ডাকাতির ০২টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

১০। মোঃ আবুল কালাম পেশায় গাড়ী চালক। সে উক্ত পেশার আড়ালে রাজধানীর ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন যাত্রীবাহী গাড়িতে উঠে জুস, চিপস্সহ বিভন্ন প্রকার খাদ্যদ্রব্যের সাথে কৌশলে চেতনা নাশক ওষুধ মিশিয়ে যাত্রীদের অচেতন করে তাদের কাছে থাকা টাকা ও মোবাইলসহ বিভিন্ন মূল্যবান সম্পদ ছিনতাই করতো। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে রাজধানীর কদমতলী থানায় ০১টি ছিনতাই মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

১১। গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর