দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের জোড়শিং, আংটিহারা, চরামুখা ও গোলখালী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বেড়িবাঁধের পাশে বসবাসকারীদের অনেকেই তাঁদের ঘরবাড়ি ভেঙে নিচ্ছেন। তাঁদের সবাই জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে কোনো তথ্য জানেন না।
কয়রার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের জোড়শিং গ্রামের জেলে আবুল কালাম গাজী বলেন, ‘কিছুদিন আগে খাজনাও দিয়েছি। এখন শুনছি বাড়ির ওপর দিয়ে বাঁধের রাস্তা হবে। কাজও শুরু হইছে। বিনা নোটিশে বাঁধের রাস্তার কথা বলে আমার বসতঘরটি ভেঙে ফেলতে বলছে। আমাগো তো আর অন্য কোনো জায়গাজমি নাই। সরকার যদি এই জমি নেয়, তাহলে আমাদের ক্ষতিপূরণ দিবে। তাও তো পাইনি। আর পাব কি না, সেটাও জানিনে। ঘর ভাঙলে পাশে যে কোথাও নতুন ঘর তৈরি করার মতো জমি, টাকা কিছুই নাই আমার।’
আবুল কালাম গাজীর মতো একই সমস্যায় আছেন ওই এলাকার ইউনুস সরদার। গোলপাতার ছাউনি দেওয়া নিজ ঘরের চালা খুলতে গিয়ে বলেন, ‘১২ কাঠা জমি কিনে বাড়িটি করেছিলাম। ৮ কাঠা চলে যাচ্ছে বাঁধে। ঠিকাদার ও পাউবোর কর্মকর্তারা এসে আমার ঘর সরিয়ে নিতে বলেছেন। তবে অধিগ্রহণ–সংক্রান্ত কোনো লিখিত নোটিশ পাইনি।’
খুলনার কয়রা উপজেলায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও পুনর্বাসন প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ না করে ব্যক্তিমালিকানাধীন ভূমির ওপর বাঁধের কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এতে বাঁধের পাশে ঘর বা জমি থাকা মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ার আগেই তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। টাকা পাবেন কি না, তা নিয়েও তাঁদের শঙ্কা রয়েছে।
পাউবো খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, ‘এই কাজে আমাদের ৩৫ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। অনুমোদন হলে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত জমি মালিকদের ক্ষতিপূরণের অর্থ দেওয়া হবে।’ অধিগ্রহণের আগে কাজ শুরুর বিষয়ে তিনি বলেন, জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এ কারণে অধিগ্রহণের পরে কাজ শুরু করতে গেলে বিলম্বের কারণে সামনের বর্ষায় বেড়িবাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো ভেঙে পুরো এলাকা তলিয়ে যেতে পারে। এ কারণে বাঁধ নির্মাণের কাজ একটু দ্রুত শুরু করতে হয়েছে।
খুলনা পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে দক্ষিণ বেদকাশী ও উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নকে রক্ষায় ৪৮টি গুচ্ছে একটি প্রকল্পের অধীনে ১৪/১ নম্বর পোল্ডারটিতে প্রায় ৩২ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হবে। ১৪/১ নম্বর পোল্ডারটি পড়েছে কপোতাক্ষ ও শাকবাড়ীয়া নদীর পাড়ে। ১ হাজার ১৭২ কোটি ৩১ লাখ টাকার এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত।
আংটিহারা গ্রামের নুরবক্স শেখের অভিযোগ, ‘বনের নদীতে মাছ ধরেই জীবন চলে। বাপ-দাদার ভিটার অনেকটাই বিলীন হয়েছে শাকবাড়ীয়া নদীতে। এখন সামান্য যা আছে, তা থেকেও বাঁধের জন্য জমি নিচ্ছে সরকার। জমিতে বাঁধের কাজও শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা এখনো ক্ষতিপূরণের কোনো টাকা পাইনি। সরকারি নোটিশও পাইনি। কবে পাব, তা–ও জানি না।’
দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আসের আলী মোড়ল বলেন, জমি অধিগ্রহণের পরই কাজ করা উচিত। ভূমিহীন-গৃহহীনদের জন্য বিকল্প একটি ব্যবস্থা করে উচ্ছেদ করলে মানুষগুলো এত কষ্ট পেত না। নদীর চরে তো হাজার হাজার বিঘা খাসজমি পড়ে আছে।