কেরানীগঞ্জ সংবাদদাতা মোঃ ইমরান হোসেন ইমু। ঢাকার কেরাণীগঞ্জ থানার কলাতিয়া এলাকায় অ্যাপিছ গ্লোবাল লিমিটেড নামের একটি কারখানায় নৈশ প্রহরীদের বেঁধে ডাকাতির ঘটনায় আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়া ডাকাতির মালামাল ক্রয়কারী পলাতক এক আসামির স্ত্রীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়ার ব্যক্তিরা হলেন—হামিদুল ইসলাম, আমিরুল ইসলাম ওরফে রাজু, জাহিদ মিয়া, মনিরুল ইসলাম ওরফে রতন ড্রাইভার, আজিজুল হক ওরফে আজিজ ড্রাইভার, ইস্রাফিল, সজল মিয়া ও লুণ্ঠিত মালামাল ক্রয়কারী মোশাররফের স্ত্রী রাশিদা বেগম। এছাড়াও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দুইটি কাভার্ড ভ্যান, ২১ হাজার ৫০০ মিটার রেইনকোর্টের ফেব্রিক্স, ২ হাজার ৯২৫ মিটার কোটিং ফেব্রিক্স, ২৫০ কেজি মেস কাপড়, ৪০০ পিস ছাই রংয়ের কম্বল, একটি স্ট্যান্ড ফ্যান উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া এসব মালামালের দাম ৮২ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা বলে জানিয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) আসাদুজ্জামান। গত ২ জুলাই দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে একদল সশস্ত্র ডাকাত কেরাণীগঞ্জ মডেল থানার কলাতিয়া নিশানবাড়ী এলাকায় অ্যাপিছ গ্লোবাল লিমিটেড নামের কারখানায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান জানান, কারখানাটিতে দায়িত্বরত নৈশ প্রহরী গেটে তালা লাগানোর সময় চার থেকে পাঁচজন জন সশস্ত্র ডাকাত জিম্মি করে এবং একজন নৈশপ্রহরীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে তিনটি আঙুল কেটে ফেলে। ডাকাত দল নৈশপ্রহরীদের হাত-পা, চোখ-মুখ বেঁধে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়। ডাকাতরা কারখানার সিকিউরিটি ইনচার্জকে উলঙ্গ করে এলোপাথারী মারপিট করে। পরে তাদের হাত-পা, চোখ-মুখ বেঁধে খাটের উপর কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখে। এরপর ডাকাতদলের আরও আট থেকে ১০ জন সদস্য দুটি কাভার্ড ভ্যান নিয়ে কারখানায় প্রবেশ করে। ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার বলেন, ‘ডাকাতদল কয়েকঘন্টা ধরে কারখানার ভিতরে থাকা মূল্যবান কম্বল, কোটিং ফেব্রিক্স, রেইনকোর্ট ফেব্রিক্স, মেস কাপড়, স্ট্যান্ড ফ্যান, সিলিং ফ্যান একটি কাভার্ড ভ্যানে উঠায়। তারপর সিকিউরিটি গার্ডদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে লুণ্ঠিত মালামাল কাভার্ড ভ্যান ভর্তি করে পালিয়ে যায়।’ চাঞ্চল্যকর এই ডাকাতির ঘটনায় কারখানার মালিক আবুল কালাম আজাদ কারখানার বিভিন্ন লুণ্ঠিত মালামাল যার দাম ৮২ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা ডাকাতি হয়েছে এমন অভিযোগ এনে অজ্ঞাতনামা ১৪ থেকে ১৫ জনের বিরুদ্ধে কেরাণীগঞ্জ মডেল থানায় একটি ডাকাতি মামলা করেন। পুলিশের ভাষ্য, চাঞ্চল্যকর এই ডাকাতি মামলার মূল রহস্য উদঘাটন এবং ঘটনায় জড়িত আসামীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের জন্য ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান নির্দেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আমিনুল ইসলামের সার্বিক দিক নির্দেশনায় কেরাণীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন কবীরের নেতৃত্বে একটি বিশেষ তদন্ত দল দূর্র্ধষ এই ক্লুলেস কারখানায় ডাকাতির মূল রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে ঘটনার পর থেকেই ব্যাপক তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন। কেরাণীগঞ্জ সার্কের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন কবীরের নেতৃত্বে ও কেরাণীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন-অর রশিদের সহযোগিতায় কেরাণীগঞ্জ মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অলক কুমার দের ।ও এসআই/ মোহাম্মদ ফজলুল হক সহ একটি চৌকষ আভিযানিক দল ঢাকার সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালায়। অভিযানে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান বলেন, ‘গ্রেপ্তার আসামিরা ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, লুণ্ঠিত মালামাল বিক্রির জন্য মোশাররফের গুদামে রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে পুলিশ পলাতক আসামি মোশাররফের স্ত্রী রাশিদার স্বীকারোক্তি ও দেখানোমতে তাদের গুদাম থেকে উল্লেখিত ডাকাতির ঘটনায় লুণ্ঠিত সকল মালামাল উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।’ ‘আসামিরা সবাই আন্তঃজেলা ফ্যাক্টরি ডাকাতচক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা ছদ্মবেশে ঢাকার আশেপাশের দুরবর্তী ও নির্জন এলাকায় অবস্থিত বিভিন্ন ফ্যাক্টরির মালামাল ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা রেকি করে। যেসব ফ্যাক্টরির অবস্থান নির্জন এলাকায় এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থায় দূর্বল সেটিকে টার্গেট করে ডাকাতি করে।