বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৯ পূর্বাহ্ন

রাজবাড়ী বালিয়াকান্দির সেফটি ট্যাংকে গৃহবধূর পঁচা-গলা লাশ শিরোনামে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার পলাতক প্রধান আসামী উজ্জল শেখ’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব ১০

কেরানীগঞ্জ সংবাদদাতা মোঃ ইমরান হোসেন ইমু
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট, ২০২৩
  • ১৯৮ বার পড়া হয়েছে

রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দির সেফটি ট্যাংকে গৃহবধূর পঁচা-গলা লাশ শিরোনামে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার পলাতক প্রধান আসামী উজ্জল শেখ’কে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ফরিদপুর জেলার কোতয়ালী এলাকা হতে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব ১০।

১। র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই দেশের সাবির্ক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সব ধরণের অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। জঙ্গী, সন্ত্রাসী, সংঘবদ্ধ অপরাধী, ছিনতাইকারী, মাদক ব্যবসায়ী এবং অপহরন, ধর্ষণ ও হত্যাসহ, বিভিন্ন মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেফতারে র‌্যাব নিয়মিত অভিযান চালিয়ে আসছে। গোয়েন্দা নজরদারী ও আভিযানিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে র‌্যাব ইতিমধ্যেই জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।

২। গত ০৩ আগস্ট ২০২৩ খ্রিঃ তারিখ রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি থানাধীন তেতুলিয়া এলাকায় বসবাসরত মিনু বেগম (২৭), স্বামী-উজ্জল শেখ নামক এক গৃহবধূর নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। অতঃপর নিখোঁজের স্বামী উজ্জল শেখ, তার মা ও বাবা মিনু বেগম এর পরিবারের লোকজনদের খবর দিয়ে মিনু বেগমের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি জানায় এবং থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করার বিষয়ে আলোচনা করে। উক্ত ঘটনাটি জানার পর নিখোঁজ ভিকটিমের পরিবারের লোকজন সম্ভাব্য সকল জায়গায় যোগাযোগ করে কোথাও কোন সন্ধান না পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করতে থাকে।

৩। অতঃপর বিবাদীদের বসতবাড়ীর আশপাশের লোকজন এর মাধ্যমে জানা যায় যে, বিবাদীদের বাড়ীর আশপাশ হতে অস্বাবাভিক পচা গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে ভিকটিম এর পরিবারের লোকজন স্থানীয় লোকজনদের সহযোগীতায় ও কতিপয় স্থানীয় সাংবাদিকদের সম্মুখে গত ১৯ আগস্ট ২০২৩ খ্রিঃ তারিখ বিবাদীদের বাড়ীর বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করার একপর্যায় তাদের টয়লেট এর ¯øাব সড়ালে উক্ত টয়লেট এর সেফটি ট্যাংক এর ভিতরে ভিকটিম মিনু বেগম এর পঁচা-গলা লাশ দেখা যায়। পরবর্তীতে বালিয়াকান্দি থানা পুলিশকে খবর দিলে তারা ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয় লোকজনদের সহযোগীতায় সেফটি ট্যাংক হতে ভিকটিম এর গলিত লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করতঃ লাশ ময়না তদন্তের জন্য রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে।

৪। উক্ত ঘটনার পর ভিকটিম এর মা সোনা বানু (৫৮) বাদী হয়ে রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি থানায় ভিকটিমের স্বামী-উজ্জল শেখ (৩০), ভিকটিমের শশুর মোঃ কুদ্দুস শেখ (৫২) ও ভিকটিমের শাশুড়ী জহুরা বেগম (৪৭)সহ অজ্ঞাতনামা আরো ৩/৪ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং-১৪, তারিখ-১৯/০৮/২০২৩ খ্রিঃ ধারা-৩০২/২০১/৩৪ দন্ড বিধি।

৫। ইতোমধ্যে হত্যাকান্ডটি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে প্রচারে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। হত্যাকান্ডের বিষয়টি জানতে পেরে র‌্যাব বর্ণিত ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।

৬। এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় র‌্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল গতকাল ২১ আগস্ট ২০২৩ খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক রাত ১৯:৪৫ ঘটিকায় ফরিদপুর জেলার কোতয়ালী থানাধীন রাজবাড়ী মোড় এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর গৃহবধূকে হত্যা করে লাশ টয়লেট এর সেফটি ট্যাংকে লুকিয়ে রেখে নৃশংস ও পাশবিক হত্যাকান্ডের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারী ভিকটিমের স্বামী উজ্জল শেখ (৩০), পিতা-মোঃ কুদ্দুস শেখ, সাং-তেতুলিয়া, থানা-বালিয়াকান্দি, জেলা-রাজবাড়ী’কে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উজ্জল শেখের মা জহুরা বেগম যিনি এই মামলার ৩ নং আসামী, গ্রেফতারকৃত উজ্জলের উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে তার সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।

৭। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানায়, গ্রেফতারকৃত আসামি উজ্জল শেখ এর সাথে ভিকটিম মিনু বেগম এর ১২ বছর পূর্বে বিয়ে হয়। বিয়ের ০৯ বছর যাবৎ তাদের দাম্পত্য জীবনে কোন সন্তান না হওয়ায় উজ্জল ১ম স্ত্রী মিনু বেগম এর অনুমতি ব্যতীত লুকিয়ে রাবেয়া বেগম (৩০), পিতা-ছত্তার শেখ, সাং-আড়পাড়া, থানা-মধুখালী, জেলা-ফরিদপুর এর সাথে ২য় বিবাহে আবদ্ধ হয় এবং সে প্রায়ই সেখানে যাওয়া-আসা করে। ২য় বিবাহের বিষয়টি ভিকটিম মিনুসহ তার পরিবারের সবাই জেনে যায় এবং এ নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়। যার ফলে আসামি উজ্জল ও ভিকটিম মিনুর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া-বিবাধ হতো এবং উজ্জল ভিকটিম মিনু’কে মারধরও করত বলে জানা যায়।

৮। পরবর্তীতে গত ০৩/০৮/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ পুনরায় তাদের মধ্যে বিবাদের সৃষ্টি হয়। উক্ত বিবাদকে কেন্দ্র করে উজ্জল মিনু’কে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক গত ০৫/০৮/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক ভোর রাত ০৪.০০ ঘটিকায় আশপাশের লোকজন ঘুমিয়ে পড়লে উজ্জল ভিকটিম মিনুকে গলা টিপে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে এবং উজ্জলের বাবা কুদ্দুস ও মা জহুরা মিলে ভিকটিমের লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে তাদের টয়লেট এর সেফটি ট্যাংক এর ভিতরে লুকিয়ে রেখে ভিকটিম মিনু নিখোজ হওয়ার নাটক সাজায়।

৯। গ্রেফতারকৃত আসামীকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর