১। র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই দেশের সাবির্ক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সব ধরণের অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। জঙ্গী, সন্ত্রাসী, সংঘবদ্ধ অপরাধী, ছিনতাইকারী, মাদক ব্যবসায়ী, অপহরন ও হত্যাসহ বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর মামলার আসামীদের গ্রেফতারে র্যাব নিয়মিত অভিযান চালিয়ে আসছে। গোয়েন্দা নজরদারী ও আভিযানিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে র্যাব ইতিমধ্যেই জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
২। ভোলা জেলার শশীভূষণ থানাধীন পালোয়ান বাড়ী এলাকায় বসবাসকারী মোঃ আব্দুল মুনাপ পালোয়ান (৫২) এর ছেলে মোঃ হারুন (১৭) পেশায় ইজিবাইক চালক। সে ইজিবাইক চালিয়ে অর্থ উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ ও তার পরিবার পরিচালনা করে আসছিল। গত ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক বিকাল ০৩:৩০ ঘটিকায় ইজিবাইক চালক হারুন প্রতিদিনের ন্যায় সে ইজিবাইক নিয়ে যাত্রী পরিবহন করার জন্য বাসা থেকে বের হয়। ঐদিন আনুমানিক রাত ২০:০০ ঘটিকায় মুনাপ তার ছেলে হারুনকে ফোন করে বলে বাড়ী ফেরার সময় তার জন্য পান নিয়ে আসার জন্য। জবাবে হারুন তার বাবাকে জানায় যে, সে যাত্রী পরিবহন করছে যাত্রী পরিবহন শেষে বাড়ী ফেরার সময় পান নিয়ে আসবে। অতঃপর প্রতিদিনের ন্যায় হারুন আনুমানিক রাত ১০:০০ ঘটিকা হতে ১১:০০ ঘটিকার মধ্যে বাসায় ফেরার কথা থাকলেও ঐদিন রাতে সে বাসায় না ফিরলে তার পরিবারের লোকজন তাকে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে কোন সাড়া না পেয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে এবং তাকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। খোঁজাখুঁজির একপর্যায় পরদিন ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রিঃ তারিখ সকাল আনুমানিক ০৬:৩০ ঘটিকায় স্থানীয় লোকজন কর্তৃক জানতে পারে যে, ভোলা জেলার চরফ্যাশন থানাধীন মেঘনা নদী সংলগ্ন ফাঁকা মাঠে তার ছেলে ভিকটিম হারুনের গলা কাটা লাশ পড়ে আছে। উক্ত সংবাদ প্রাপ্তির সাথে সাথে ভিকটিম হারুনের পিতা ও তার পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে হারুনের লাশ শনাক্ত করে। পরবর্তীতে তারা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘনটাস্থলে এসে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করতঃ লাশ ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।
৩। উক্ত ঘটনার পর মৃতের পিতা মোঃ আব্দুল মুনাপ পালোয়ান (৫২) তার পরিবারের সাথে পরামর্শ করতঃ ভোলা জেলার চরফ্যাশন থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। যার মামলা নং-০৬, তারিখ-২০/১২/২০২৩খ্রিঃ; ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড-১৮৬০। ইতোমধ্যে হত্যাকাÐটি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইলেকট্রনিক প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারের কারণে দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
৪। পরবর্তীতে ভোলা জেলার চরফ্যাশন থানা পুশিল উক্ত হত্যাকাÐে জড়িত আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাব-১০, কেরাণীগঞ্জ, ঢাকা’কে ০১টি অধিযাচনপ্রত্র প্রেরণ করে। উক্ত অধিযাচনপত্রের মাধ্যমে ঘটনাটি জানতে পেরে র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল উক্ত চাঞ্চল্যকর ও ক্লু-লেস হত্যাকাÐের রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকাÐে জড়িত আসামীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে।
৫। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক রাত ২২:৫০ র্যাব-১০ এর উক্ত আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে। উক্ত অভিযানে চাঞ্চল্যকর ও ক্লু-লেস ইজিবাইক চালক মোঃ হারুন হত্যাকাÐে সরাসরি জড়িত পলাতক আসামী মোঃ মিজানুর রহমান (২৮), পিতা-মোঃ ফজলার রহমান, সাং-টেকেরহাট মসজিদ, থানা-চরফ্যাশন, জেলা-ভোলা, বর্তমান ঠিকানা-কালীগঞ্জ, থানা-দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ, জেলা-ঢাকা‘কে গ্রেফতার করে।
৬। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত আসামী একজন ইজিবাইক ছিনতাইকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। সে ও তার অপর ০৩ জন সহযোগীরা মিলে গত ১৯/১২/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ রাতে ইজিবাইক ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে ভিকটিম হারুন’কে ঘটনাস্থলে যাওয়ার কথা বলে ইজিবাইক ভাড়া নেয়। পরবর্তীতে তারা পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক তাদের সুবিধাজনক স্থান ঘটনাস্থলে পৌছালে ভিকটিম হারুন’কে ইজিবাইক থেকে নামিয়ে সুইচ গিয়ার চাকু দিয়ে গলা কেটে জবাই করে নৃশংসভাবে হত্যা করে। পরবর্তীতে ভিকটিম হারুনের লাশ উল্লেখিত মেঘনা নদীর পাড়ে একটি ফাঁকা জায়গায় ফেলে রেখে ভিকটিমের ইজিবাইক নিয়ে পালিয়ে যায় বলে জানা যায়।
৭। গ্রেফতারকৃত আসামীকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।