১। র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সব ধরণের অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও র্যাব নিয়মিত জঙ্গী, সন্ত্রাসী, সংঘবদ্ধ অপরাধী, ছিনতাইকারী, মাদক ব্যবসায়ী এবং অবৈধ অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আসছে। র্যাবের এই অভিযানিক কার্যক্রম ইতোমধ্যেই জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
২। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ২৩ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক রাত ২৩:৫০ ঘটিকায় র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানী ঢাকার হাতিরঝিল এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে। উক্ত অভিযানে ০৪ জন আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্র ও অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত আসামিদের নাম ১। মোঃ এনামুল হক (৫৪), পিতা-মমিনুল হক, সাং-বিজবাগ, থানা-সেনবাগ, জেলা-নোয়াখালী, ২। মোঃ সফিকুল ইসলাম (৫৪), পিতা-মোঃ আক্কাস আলী বিশ^াস @ আব্বাস আলী, সাং-চর চৌগাছি, থানা-শ্রীপুর, জেলা-মাগুরা, ৩। মোঃ এরশাদ আলী (৩৬), পিতা-মোঃ আক্কাস আলী, স্থায়ী সাং-তেলিখালি, থানা-ভান্ডারিয়া, জেলা-পিরোজপুর ও ৪। সৈয়্যদ মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ (৩৪), পিতা-সৈয়দ মোঃ ইউসুফ, সাং-উত্তর মাদার্শা, থানা-হাটহাজারী, জেলা-চট্টগ্রাম বলে জানা যায়। এ সময় তাদের নিকট হতে প্রতারণা ও সন্ত্রাসীর কাজে ব্যবহৃত ০১টি প্রাইভেটকার জব্দ এবং ০১টি বিদেশী পিস্তল, ০১টি ম্যাগাজিন, ০৬ রাউন্ড এ্যামোনেশন, ০১টি খেলনা পিস্তল, ১০ কেজি নকল সাপের বিষ, ০১টি এ্যালবাম, ০২টি সিডি, নগদ- ৩৬,২৩৫/- টাকা ও ভারতীয় ৩৬০ রুপি উদ্ধার করা হয়।
৩। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, প্রতারক চক্রটি সাপের বিষ রাখতে বিশেষ ধরণের কাচের কৌটা ব্যবহার করে। এসব কাচের কৌটার গায়ে লেখা থাকে বিভিন্ন দেশের নাম ও কোড নম্বর। তারা দেশের বিভিন্ন এলাকা হতে উক্ত বিষ সংগ্রহ করে পরবর্তীতে বিষগুলো বাহিরের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে আনা হয়েছে বলে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির নিকট বিক্রিসহ পার্শ¦বর্তী দেশে প্রতারণা ও চোরাচালানের মাধ্যমে পাচার করে লোক ঠকিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল বলে জানায়। দেশী-বিদেশী বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিগুলো এসব সাপের বিষ লাখ লাখ টাকা দিয়ে কেনে। কারণ বৈধভাবে দেশের বাইরে থেকে এসব সাপের বিষ আনতে হলে আরও কয়েকগুণ বেশি টাকা গুণতে হয়। কম দামের কারণে ক্রেতারা সহজে প্রতারকদের ফাঁদে পা দেয়।
৪। চক্রটি ক্রেতাদেরকে বলে যে, তাদের কাছে একটি বিদেশী পিস্তল আছে, যা দিয়ে সাপের বিষের কৌটায় ফায়ার করলে কৌটাটি ফাটবে না। আর বিষ নকল হলে কৌটাটি ফেটে যাবে। তারা আরও বলে অরিজিনাল বিষ স্বচ্ছ কাঁচের জারে রাখার পর এর ওপর লেজার লাইট ধরলে একপাশ থেকে অন্য পাশে যাবে না। এছাড়াও তারা ক্রেতাদেরকে তাদের কাছে থাকা বিভিন্ন বই, এ্যালবাম ও সিডি দেখায়। যেগুলোতে বিষ কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে এবং কিভাবে ব্যবহার করতে হবে সেসব লেখা থাকে। তারা এগুলোকে মূল্যবান সাপের বিষ বলে গোপনে প্রচারণা চালায়। র্যাব-১০ কথিত সাপের বিষগুলো উদ্ধার করতঃ র্যাব সদর দপ্তর ফরেনসিক বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে পরীক্ষা করে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয় যে, উক্ত কাঁচের বোতলে রক্ষিত সাপের বিষগুলো নকল যাতে সাপের বিষের কোন বৈশিষ্ট্য নেই।
৫। জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, গ্রেফতারকৃত আসামিরা সংঘবদ্ধভাবে বেশ কিছুদিন যাবৎ দেশের বিভিন্ন স্থান হইতে কথিত নকল সাপের বিষ সংগ্রহ করে হাতিরঝিলসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার জনসাধারনের নিকট প্রতারণামূলকভাবে বিক্রয় করে অর্থ আতœসাৎ করে আসছে। এছাড়াও তারা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাদের সুবিধা মত স্থানে বিভিন্ন লোকজনদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজী, ছিনতাইসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে আসছিল।
৬। গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করতঃ সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।