চলতি সপ্তাহ থেকে বাড়তি দামের আটা-ময়দা বাজারে আসতে শুরু করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, আটার দাম কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে।
চিনির বাজারের সংকট এখনো কাটেনি। এর মধ্যে আটা-ময়দার বাজারও অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। উৎপাদন কমে যাওয়ায় বাজারে এখন আটার সরবরাহেও টান লেগেছে। এতে খোলা ও প্যাকেটজাত উভয় ধরনের আটার দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে তিন থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে। এতে সাধারণ মানুষের সংসার খরচে আরেক দফা চাপ বাড়বে। প্রভাব পড়বে রেস্তোরাঁ ও বেকারির ব্যবসায়।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পাইকারি-খুচরা ব্যবসায়ী ও আটা-ময়দা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সপ্তাহ
আগেও বাজারে প্যাকেটজাত দুই কেজি আটার সর্বোচ্চ দাম ছিল ১২৬ টাকা। গত বুধবার থেকে কোম্পানিগুলো বাজারে নতুন যে প্যাকেটজাত
আটা বাজারে ছেড়ে সেগুলোর গায়ের দাম বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৩২ টাকা। তাতে প্যাকেটজাত আটার প্রতি কেজির সর্বোচ্চ দাম পড়ছে ৬৬ টাকা। সেই হিসাবে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত আটার দাম আরও তিন টাকা বাড়ল। তবে এখনো রাজধানীর কোনো কোনো বাজারে পুরোনো দামে আটাও পাওয়া যাচ্ছে। আবার কোম্পানিভেদে আটার দামও ভিন্ন ভিন্ন রয়েছে।
দোকানে বর্তমানে কোনো আটা-ময়দা নেই। আবার সরবরাহ আদেশ বা এসওর মাধ্যমেও কোনো কেনাবেচা নেই। তাই এক সপ্তাহ ধরে আটা-ময়দা বিক্রি বন্ধ রেখেছি।
মো. আরমান, ব্যবস্থাপক, ইয়াসিন স্টোর, মৌলভীবাজার
প্যাকেটজাত আটার পাশাপাশি বাজারে খোলা আটার দামও বেশ বাড়তি। প্রতি কেজি খোলা আটা রাজধানীর কোনো কোনো বাজারে খুচরায় সর্বোচ্চ ৬৫ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও মানভেদে খোলা আটার দাম ছিল কেজি প্রতি ৫৪ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে। বর্তমানে ঢাকার বিভিন্ন বাজারে মান ভেদে খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা কেজিতে। আগে প্যাকেটজাত আটার চেয়ে খোলা আটার দাম কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা কম থাকত। এখন তা প্রায় সমান হয়ে এসেছে।
বাজারে আটার দাম বাড়তির দিকে জানিয়ে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক এস এম মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জ্বালানি–সংকটের কারণে রেশনিং করেও কারখানার সক্ষমতার ৫০ শতাংশ পণ্যও উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। আবার বাজারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম।’
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবেও বাজারে আটা-ময়দার দাম বাড়তি। টিসিবির হিসাবে বাজারে খোলা আটা প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা ও প্যাকেটজাত আটা ৬০ থেকে ৬৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি খোলা ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। তবে প্যাকেটজাত ময়দার দাম আরেকটু বেশি—কোম্পানি ও মানভেদে প্রতি কেজির দাম ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। সংস্থাটির হিসাবে গত এক মাসে নতুন করে খোলা আটা ও ময়দার দাম বেড়েছে যথাক্রমে ১০ ও ১৬ শতাংশ। আর এক বছরের ব্যবধানে খোলা ও প্যাকেটজাত আটার দাম বেড়েছে যথাক্রমে ৭৩ ও ৬৮ শতাংশ। আর খোলা ও প্যাকেটজাত ময়দার দাম বেড়েছে ৬৭ ও ৫৫ শতাংশ।
পাইকারি বাজারে আটা-ময়দার সংকট তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে রাজধানীর মৌলভীবাজারের ইয়াসিন স্টোরের ব্যবস্থাপক মো. আরমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দোকানে বর্তমানে কোনো আটা-ময়দা নেই। আবার সরবরাহ আদেশ বা এসওর মাধ্যমেও কোনো কেনাবেচা নেই। তাই এক সপ্তাহ ধরে আটা-ময়দা বিক্রি বন্ধ রেখেছি।’
পাইকারি বাজারের সরবরাহ–সংকটের প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারের রাফি স্টোরের বিক্রেতা মো. হেরাজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাজারে আটা-ময়দার সরবরাহ এখন কম। পাইকারি বাজার থেকে গতকাল ৫০ কেজির এক বস্তা আটা কিনেছি ২ হাজার ৯৫০ টাকায়। পরিবহন ও মজুরি বাবদ আরও প্রায় ১০০ টাকা খরচ হয়েছে। তাতে প্রতি কেজি আটা ৬২ থেকে ৬৩ টাকায় বিক্রি না করলে কোনো লাভ থাকবে না।’
এদিকে রাজধানীর খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আটা-ময়দার দাম বাড়তে শুরু করায় মানুষ এখন কিনছেও কম। তা সত্ত্বেও পাইকারি বাজারে পর্যাপ্ত আটা ময়দা মিলছে না। গত কয়েক সপ্তাহে চিনির বাজারে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তা এখনো চলমান। প্রতি কেজি চিনি বর্তমানে ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তা–ও চাহিদামতো চিনি পাচ্ছে না ক্রেতারা। এতে দেশের বেকারি পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা চাপে পড়েছেন।
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি মো. ওসমান গনি প্রথম আলোকে বলেন, রেস্তোরাঁ ব্যবসার উপকরণের দাম বছরজুড়েই বাড়তি। এতে ব্যবসা সংকুচিত হয়ে এসেছে, লাভ কমেছে। এখন আবার গ্যাসের সংকটে রান্না করা যায় না। বিদ্যুৎ যাওয়া-আসার মধ্যে থাকে। সব মিলিয়ে ব্যবসা করার মতো পরিস্থিতি নেই।
দেশে বছরে প্রায় ৭৫ লাখ টন গমের চাহিদা আছে। এর প্রায় ৬৫ লাখ টন আমদানি হয়। বেসরকারি কোম্পানিগুলো গম আমদানি করে আটা ও ময়দা প্যাকেটজাত করে বিক্রি করে। আবার খোলা অবস্থায়ও বিক্রি হয়। বছরজুড়ে কয়েক দফায় আটা-ময়দার দাম বেড়েছে। এতে চাপে পড়েছেন সাধারণ মানুষ থেকে ব্যবসায়ী সবাই।